Thursday, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

অবশেষে মোদির ঢাকা সফর চূড়ান্ত

ডেস্ক রিপোর্টঃ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এটাই হবে প্রথম বিদেশ সফর। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটা বাংলাদেশে তার দ্বিতীয় সফর। সীমান্ত হত্যা, তিস্তাসহ অভিন্ন নদী ও দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে কী আলোচনা হবে, এ নিয়ে দুই দেশের সব মহলের মধ্যেই আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে গত দুই বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে চলা ‘শীতল সম্পর্কের’ পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় লাভ-ক্ষতির হিসাব কী হবে সেটিও আলোচনা হচ্ছে। যদিও দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে গত এক মাস ধরেই দুই দেশের মধ্যে সচিব পর্যায়ের একাধিক বৈঠক হয়েছে। দুই দেশে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকও হয়েছে।

 

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সম্মতিপত্র গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বার্তা পৌঁছে দেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সমস্যা থাকতেই পারে। আমরা মনে করি, এ সমস্যা আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।’

 

শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় তার প্রশংসা করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জয়শঙ্কর বলেন, ‘এটি একটি বিশাল অর্জন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভূতপূর্ব।’

আরও পড়ুনঃ লিখটেনস্টাইন: ইউরোপের মাইক্রো স্টেট – ছবির মতো সুন্দর এক দেশ, যে দেশে নেই কোন এয়ারপোর্ট।

জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদানের লক্ষ্যে ঢাকা সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে তার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উৎসব উদযাপনে যোগদান ভারতের জন্য একটি বিরাট সম্মানজনক বিষয়।’

কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ মহামারীর কারণে এতদঞ্চলের আমরা সবাই সংকটের মুখোমুখি।’ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার ভারতের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন সহায়তার জন্য ভারতের প্রশংসা করেন। গত মাস থেকে বাংলাদেশে টিকা প্রদান শুরু করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি এবং তার দলের নেতাকর্মীসহ সরকারি সংস্থাগুলোর মহামারী মোকাবিলায় সফলভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে কভিড-১৯ মহামারী, বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানি গোয়েন্দা বিভাগের সিক্রেট ডকুমেন্টের সাতটি ভলিউম ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উপহার দেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বাবা ভারতের সিভিল সার্ভেন্ট কে সুব্রামনিয়ামের লেখা ‘লিবারেশন ওয়ার অব বাংলাদেশ’সহ দুটি গ্রন্থ প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সকালে সংক্ষিপ্ত সরকারি সফরে ঢাকায় আসেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের আমন্ত্রণে তিনি এ সফরে আসেন। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বামী উপস্থিত ছিলেন।

মূলত নরেন্দ্র মোদির সফরের ইতিবাচক বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পৌঁছে দিতেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসেছেন এক দিনের জন্য। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের নতুন বার্তাও দিয়েছেন তিনি। ভারত স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উচ্চতায় নিতে কানেক্টিভিটির ওপর জোর দিতে চায়। তারা এক্ষেত্রে দুই দেশের সঙ্গে আরও দেশ যুক্ত করে সংযুক্তির পরিধি বাড়াতে চায়। তৃতীয় দেশ হিসেবে তারা জাপানকে যুক্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এস জয়শঙ্কর এসব কথা বলেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পরে তারা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এক দিনের সফরে সকাল ১০টার দিকে ঢাকায় আসেন জয়শঙ্কর।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে আলোচনায় কী প্রাধান্য পেয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশ যদি কানেক্টিভিটির জায়গায় ঠিকমতো কাজ করতে পারে, তাহলে পুরো অঞ্চলই বদলে যাবে; বঙ্গোপসাগরীয় এলাকাকে তখন অন্যরকম মনে হবে। আমরা উভয় দেশ মনে করি এটা সম্ভব। আজকের দিনে আমাদের আলোচনার বড় অংশ জুড়ে ছিল এটা। আমরা চাইলে এক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশকেও একীভূত করতে পারি। যেমন জাপান, যাদের সঙ্গে আমাদের উভয় দেশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বঙ্গোপসাগরীয় এলাকায় জাপান অনেক কানেক্টিভিটি প্রকল্পে যুক্ত।’

এর আগে লিখিত বক্তব্যে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক গৎবাঁধা অংশীদারত্বের ঊর্ধ্বে এবং আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের বন্ধন শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং প্রগতিশীল দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কেন্দ্রবিন্দু। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উভয়পক্ষই এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে, বিশেষত ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে।’

বাংলাদেশের সঙ্গে এই সম্পর্ক ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ এবং ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির প্রাসঙ্গিকতার মধ্যেই নিহিত বলে জানান জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও একটি মূল প্রতিবেশী এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি। আমাদের সম্পর্কের প্রতিটি অর্জন সমগ্র অঞ্চলকে প্রভাবিত করে। সবাই জানেন যে, আমরা অন্যদের কাছে এই সম্পর্ককে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে উদ্ধৃত করি।’

দুই দেশের নিবিড় সম্পর্ক থাকার পরও সীমান্তে বাংলাদেশের লোকজনকে হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ভারতের অভ্যন্তরে ঘটে থাকে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা একমত হয়েছি যে, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই দুঃখজনক। কিন্তু আমরা নিজেদের প্রশ্ন করেছি, সমস্যার মূল কারণ কী এবং এটি হচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। আমাদের দুইপক্ষের অভীষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত অপরাধবিহীন সীমান্ত, যাতে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড না হয়। আমার ধারণা, আমরা দুইপক্ষ এই সমস্যার সমাধান করতে পারব।’

ঢাকা সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সফরের অনেক উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী ও শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে এটি তার জন্য আনন্দের যে তিনি এখানে আসতে পেরেছেন। করোনার কারণে সবাই সমস্যার মধ্যে আছেন। স্বাস্থ্যগত ও অন্য ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারত থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টিকা (৯০ লাখ) বাংলাদেশ পেয়েছে। এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর উপলক্ষে তিনি ঢাকায় এসেছেন। করোনা শুরু হওয়ার পরে এটি তার প্রথম বিদেশ সফর।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে মূল আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর উদ্বোধন করা হবে। টিকা সরবরাহের জন্য ভারতকে বাংলাদেশ ধন্যবাদ জানিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক রূপান্তর হচ্ছে। এ জন্য আমাদের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যে বিষয়গুলো অমীমাংসিত রয়েছে, সেগুলো নিয়েও কথা হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের মধ্যে যে অগ্রগতি হয়েছে, সেটি পর্যালোচনা করেছি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, সংযুক্তি (কানেক্টিভিটি) ও মানুষে মানুষে যোগাযোগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’

অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে জানতে চাইলে এস জয়শঙ্কর বলেন, পানি নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই পানি সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে।

সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি না। যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ৫০ বছর পার হয়ে গেছে এবং পরের ২০ বছর কী করা যেতে পারে, আমি বলব সংযুক্তি। আমাকে আপনাদের প্রধানমন্ত্রী উদ্ধৃত করে বলেছেন যে সংযুক্তি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা।

সংযুক্তি প্রসঙ্গে এস জয়শঙ্কর বলেন, আজকের বৈঠকের বড় একটি সময় তারা এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তৃতীয় পক্ষকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার বিষয়েও তারা আলোচনা করেছেন। সম্ভাব্য দেশ হিসেবে জাপানের নাম এসেছে। কারণ, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। বঙ্গোপসাগরে জাপানের সংযুক্তি প্রকল্প রয়েছে। সম্পর্কোন্নয়নে তিনি সংযুক্তিকে বড় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করেন। এ ছাড়া মানুষে মানুষে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দিন শেষে দুই দেশের সম্পর্ক মানেই উভয় দেশের জনগণের সম্পর্ক।

 

আরও পড়ুনঃ বেতন কমা সহ আরও যেসব শা’স্তি পেল জামালপুরের সাবেক ডিসি

ইউরোপ বাংলা

ইউরোপ বাংলা

একজন ফ্রিল্যান্স রাইটার, ব্লগার, এডুকেশনাল কনসালট্যান্ট, ক্যারিয়ার কাউন্সিলর, উদ্যোক্তা।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা