Friday, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বর্ণাঢ্য জীবন

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : ২০১৫ সালেই রানি ভিক্টোরিয়ার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটেনের দীর্ঘতম রাজত্বকারী শাসক ছিলেন তিনি। তার আগে এত দীর্ঘ সময় কেউ ব্রিটেনের সিংহাসনে বসেননি। ব্রিটেনের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হিসাবে তাঁর কার্যকালে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসেছেন ১৫ জন। আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসেছেন ১৪ জন। ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের ১৭ ব্রুটন সেন্টে জন্মগ্রহণ করেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেই বছরের ২৯ মে বাকিংহাম প্যালেসের ব্যক্তিগত চ্যাপেলে তার নামকরণ করা হয়।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন রাজা জর্জ এবং রানি এলিজাবেথের প্রথম সন্তান। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের পরে সিংহাসনে তার বাবা জর্জ বসলে তখন থেকেই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে গণ্য হতেন তিনি। তিনি বাড়িতে পারিবারিকভাবে শিক্ষিত হয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ স্থলসেনাবাহিনীর নারী বিভাগ অগজিলিয়ারি টেরটোরিয়াল সার্ভিসে কর্মরত থেকে জনসাধারণের দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলেন। তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন যখন তার চাচা এডওয়ার্ড অষ্টম ১১ ডিসেম্বর, ১৯৩৬ সালে পদত্যাগ করেন এবং তার পিতা রাজা ষষ্ঠ জর্জ হন। তার বয়স সে সময় ছিল ১০ বছর।

১৯৪৭ সালে তিনি গ্রিক ও ডেনমার্কের প্রাক্তন রাজপুত্র ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপকে বিয়ে করেন। এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতির চারটি সন্তান রয়েছে। তারা হলেন ওয়েলসের যুবরাজ চার্লস (জন্ম ১৯৪৮), রাজকুমারী অ্যান (১৯৫০), ইয়র্কের ডিউক যুবরাজ অ্যান্ড্রু (১৯৬০) এবং ওয়েসেক্সের আর্ল যুবরাজ এডওয়ার্ড (১৯৬৪)। ফিলিপ ২০২১ সালের এপ্রিলে ৯৯ বছর বয়সে মারা যান।

মাস কয়েক আগেই তার সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর উদযাপন করা হয়েছিল। ১৯৫২ সালে ব্রিটিশ সিংহাসনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক ঘটে। অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। সেদিনও উৎসবে মেতে উঠেছিল মানুষ। দিনটি ছিল ১৯৫৩ সালের ২ জুন। সবার দৃষ্টি লন্ডনের দিকে।

সেদিন শহরজুড়ে সব ভবন ঢাকা পড়ে গিয়েছিল অভিষেক উৎসবের সাজে, কেবল বাকিংহাম প্রাসাদের পূর্বদিকের সম্মুখভাগটাই যেন বাদ পড়েছিল। রানি এলিজাবেথের বয়স তখন ২৬। তিনি আবদার করেছিলেন যে, তার অভিষেক অনুষ্ঠানটি যেন সরাসরি টেলিভিশনে দেখানো হয়। রাজপরিবারের এ অনুষ্ঠানটির কিছু কিছু ঐতিহ্য বহু শতকের, ৯০০ বছর আগে থেকে চলছে। কিন্তু সেবার অনুষ্ঠানটি যত মানুষ দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন, তেমনটি এর আগে কখনো ঘটেনি।

বাকিংহাম প্রাসাদের সামনে থেকে সেদিনের উৎসবমুখর লন্ডনের পরিবেশ বর্ণনা করছিলেন টেলিভিশন ধারাভাষ্যকার। শুধু প্রাসাদের সামনে নয়, যে পথ ধরে রানি যাবেন, তার দুপাশেই ছিল উৎসাহী মানুষের ভিড়। সেই পথের নানা জায়গায় মোতায়েন ছিলেন আরও কয়েকজন ধারাভাষ্যকার। সাত ঘণ্টা ধরে সেদিনের অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হয়েছিল টেলিভিশনে।

তিনি যে সময় ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে জোসেফ স্ট্যালিন, চীনে মাও সেতুং এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ছিলেন হ্যারি ট্রুম্যান। সে সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা, বাহামা, বেলিজ, গ্রেনাডা, পাপুয়া নিউ গিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্টসহ ১৪টি রাজ্যের রানী হিসেবে ছিলেন। তার শাসনামলে ১৪ জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

এ বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তার প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী অর্থাৎ রাজ্যভিষেকের ৭০ বছর উদযাপন করেছেন। এর আগে ১৯৭৭, ২০০২ এবং ২০১২ সালে যথাক্রমে তার রৌপ্য, স্বর্ণ এবং হীরক জয়ন্তী উদযাপন করেছেন।

মারা যাওয়ার আগে তিনি ছিলেন বিশ্বের ইতিহাসের দীর্ঘতম শাসনকারী নারী রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত রাজ্যশাসক। বর্তমানে জীবিত রাজা-রাণীদের মধ্যে সর্বাধিক দীর্ঘকাল ধরে শাসনকারী রাজ্যশাসক এবং বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে সর্বাধিক প্রবীণ ও দীর্ঘকালীন রাষ্ট্রপ্রধান।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা