Thursday, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

‘বাজেট হয়েছে ধনীবান্ধব, বঞ্চিত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা’

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মূল্যস্ফীতির লক্ষমাত্রা ধরে রাখা, ভর্তুকির অর্থ সমন্বয়, এবং মুদ্রানীতি। সবকিছু মিলিয়ে বাজেট হয়েছে ধনীবান্ধব সেখানে বঞ্চিত হয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিুবিত্তরা। পাশাপাশি সরকার যে সব লক্ষ নিয়েছে তা বাস্তবায়নে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। অ্যামেরিকান চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত বাজেট পরবর্তী আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। তবে তারা বলছেন এখন ও অনেক সময় আছে সরকার চাইলে প্রস্তাবিত বাজেটের অনেক পরিবর্তন আনতে পারে সরকার।

রাজধানীর এক হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ আয়োজিত বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্টানটি সঞ্চালনা করেন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু চ্যালেঞ্চ আছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাজস্বসের কম আহরণ, ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষমাত্রা ধরে রাখার সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকা। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছরই রাজস্ব আহরণ কম হয় সামনের দিনেও হয়তো এমন হবে। কিন্তু সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপরিল্পনা বাজেটে নেই। যে মধ্য মেয়াদী, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া দরকার সেগুলো অনুপস্থিত। এমন কী রাজস্ব বোর্ডের কোনো সংষ্কারের কথা এখানে বলা হয় নি।

আমাদের ভর্তুকি বেড়েগেছে ৭২ হাজার কোটি টাকার মত। যেটা প্রায় ৭ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার এবং এটা আরো হয়তো বাড়বে এবং অর্থমন্ত্রী তা বলেছেন হয়তো এটা আরো বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটা বাইরের পণ্যের মূল্যের উপর নির্ভর করে। তবে কোথা থেকে কীভাবে এই ভর্তুকি মেটানো হবে তার কোনো পরিকল্পনা নেই।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে বাজেটে অর্থায়ন। বাজেটের ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বর্তমানে এখানে দুটি জিনিস করা হয়েছে বৈদেশিক উৎস থেকে আনবে সেটা ভালো কথা কিন্তু এই টাকার পরিমাণ ১১ বিলিয়ন ডলার। দু বছর আগে তা ছিলো ছয় বিলিয়ন ডলার। ঘাটতির এই বিষয়ে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আর অভ্যন্তরীন সোর্স থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করা হবে বলা হয়েছে সে জায়গায় ব্যাংকিং খাত প্রস্তুত কী না তা মাথায় রাখতে হবে? ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যে তারোল্যের সংকট। তাহলে কী করে সরকার ব্যাংক থেকে নিবে। এই চ্যালেঞ্জ কিন্তু এখানে রয়েছে।

বাজেটের কিছু ভালো দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, গার্মেন্টস ও নন গার্মেন্ট করকে অভিন্ন রাখা যাতে করে উৎপাদন ও বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা আছে। সামাজিক নিরাপ্তাখাতে বরাদ্দ প্রসঙ্গে বলবো এখানে হয় তো আরো কিছু টাকা বেশি দিতে পারলে বয়স্ক ভাতা ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা করতে পারলে হয়তো তাদের খাবারে প্লেটে আরো কিছু খাবার যোগ করা যেত। তবে সরকার মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ সরকার ঠিক করেছে তা ঠিক আছে কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য সঠিক পন্থা অবলম্বন করা হয় নি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান দেশে বিদেশী বিনিয়োগ মোট বিনিয়োগের মাত্র ১ শতংশের মত কিন্তু সরকার বাজেটে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেছে। কিন্তু কীভাবে বিনিয়োগ বাড়াবে তার দিক নির্দেশনা নেই। বেশী রাজস্ব আহরণের তাগিত নেই। নেই কোনো সংষ্কার। তিনি বলেন, ২০২২-২০২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের টার্গেট গ্রহণযোগ্য হলেও বাস্তবায়ন কঠিন হবে, নানা চ্যালেঞ্জ-সমস্যায় পড়বে। সামাজিক সুরক্ষার জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা বাজেটের অনুপাতে খুবই কম বলে মন্তব্য করেন।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সব সমাজেই বৈষম্য আছে। তবে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দিয়ে বৈষম্য কমানোর চেষ্টা করছে। কিছু ত্রিি“ট বিচ্যুতি থাকতেই পারে তবে আমরা সেগুলো কমানোর চেষ্টা করছি। তবে আমাদের দেশ যে উপরের দিকে ওঠছে উঠছে এটা স্বীকার করতে হবে।

এটা নিয়ে কারও কোন সন্দেহ নাই। উপরে উঠার গতিটা ভালো। মন্ত্রী বলেন, তবে একটা নায়ক আমাদের মধ্যে আছে। যে আমাদের এই অর্জনকে নামিয় দিতে পারে, অতীতে নামিয়েছে। আমাদের মধ্যে যে মতভিন্নতা, মতদ্বৈততা প্রকাশ পায় নানা ভাবে। এটা সকলের কাজে সরাসরি আঘাত করছে। সামাজিক নিরাপত্তা, সামাজিক স্থীতিশীলতা, সুরুক্ষা নিশ্চিত করতে না পারি, চিরাচরিত অভ্যাস পরিবর্তন করত না পারি, উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করি তাহলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা