Tuesday, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

সেনা প্রত্যাহারের হুমকি ওয়াগনার প্রধানের

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধরত ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপের নেতা বুধবারের মধ্যে ইউক্রেনের বাখমুত শহর থেকে তার সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। গোলাবারুদের সরবরাহ নিয়ে বিবাদের পর তিনি এই হুমকি দিয়েছেন। এই বিবৃতি দেওয়ার আগে যোদ্ধাদের পড়ে থাকা মরদেহের মধ্যে দিয়ে তার হাঁটার এবং রুশ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে আরো রসদ চাওয়ার একটি ভিডিও তিনি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন তার এই সিদ্ধান্তের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে স্পষ্টভাবে দায়ী করেছেন। রাশিয়া কয়েক মাস ধরে এই শহরটি দখলের জন্য লড়াই চালাচ্ছে, যদিও এই শহর কৌশলগতভাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

প্রিগোজিন প্রায়ই তার ক্রোধ উগরে দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং রাশিয়ার চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে লক্ষ্য করে। তিনি বলেন, ‘শোইগু! গেরাসিমভ! গোলাবারুদ…কোথায়?…এরা এখানে স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করতে এসে প্রাণ দিচ্ছে, যাতে তোমরা তোমাদের মেহগনি কাঠের অফিসঘরে বসে নিজেদের পেট মোটা করতে পারো।’

প্রিগোজিন প্রচারের আলোতে থাকতে ভালবাসেন এবং কয়েক মাসে তার প্রভাব কিছুটা খর্ব হয়েছে। তিনি আগেও এধরনের হুমকিধামকি দিয়েছেন, কিন্তু তারপর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে চুপ করে গেছেন। পরে তার হুমকি খারিজ করতে যুক্তি দিয়েছেন, তিনি ঠাট্টা করেছিলেন বা ওগুলো সেনাবাহিনীর মধ্যে মসকরা করা কথা।

মাত্র গত সপ্তাহেও রাশিয়ার যুদ্ধের সমর্থক এক ব্লগারকে তিনি বলেন, বাখমুতে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের কাছে বুলেটের যে সরবরাহ রয়েছে তা আর মাত্র কয়েকদিনে ফুরিয়ে যাবে। তাদের কয়েক হাজার রাউন্ড গোলাবারুদের প্রয়োজন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, এই ঘাটতি পূরণে যদি ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে তার ভাড়াটে সেনারা হয় পিছু হঠতে বাধ্য হবে, নয়ত সেখানে থেকে তাদের মরতে হবে। ‘সেটা হলে আমাদের আমলাদের লক্ষ্য যেটাই হোক, অন্য সব কিছুই ভেঙে পড়বে।’বাখমুত দখলের লড়াই চলছে বেশ কয়েক মাস ধরে এবং এই যুদ্ধে প্রাণহানি হয়েছে কয়েক হাজার। সেখানে ইউক্রেন সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এক সংগে লড়ছে ওয়াগনার সেনারা এবং রুশ সেনাবাহিনী। ইউক্রেনও যে কোনো মূল্যে এই শহরের দখল ধরে রাখতে লড়াই চালাচ্ছে।

প্রিগোজিন বলেছেন, মঙ্গলবার রাশিয়া যাতে বিজয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠান করতে পারে তার জন্য তার বাহিনী ১০ মে পর্যন্ত বাখমুতে থাকতে সম্মত হয়েছে। সেনাদের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়াগনার গ্রুপ প্রধান তার নতুন ঘোষণায় বলেছেন, ১০ মে তারা ‘বাখমুতের ছাউনি বাধ্য হয়ে সরিয়ে নেবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্য ইউনিটে এবং সেখানে অবশিষ্ট ওয়াগনার সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য শিবিরে স্থানান্তর করবেন।’ফেব্রুয়ারি মাসে প্রিগোজিন মৃত সৈনিকদের লাশের আরেকটি ছবি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন এবং তাদের মৃত্যুর জন্য সেনাপ্রধানকে দায়ী করেছিলেন। ওয়াগনার গ্রুপের সেনাদের ইচ্ছে করে গোলাবারুদ না জোগানোর অভিযোগ রুশ সামরিক বাহিনী অস্বীকার করলেও তারা সম্মুখ রণাঙ্গনে সে সময় বাড়তি সরবরাহ পাঠিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামরিক বিশ্লেষক রব লির যুক্তি হলো, ওয়াগনারের সর্বসাম্প্রতিক এই অভিযোগ থেকে মনে হচ্ছে, ইউক্রেনের দিক থেকে বড় ধরনের যে পাল্টাহামলা রাশিয়া আশঙ্কা করছে, তা প্রতিহত করার লক্ষ্যে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্ভবত গোলাবারুদের সরবরাহ রেশন করছে। তিনি বলছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে সবগুলো রণাঙ্গনের কথা ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু প্রিগোজিন শুধু ভাবছেন বাখমুত দখলের কথা। প্রিগোজিন নিজেই আভাস দিয়েছিলেন, ইউক্রেন পাল্টা হামলা শুরু করবে ১৫ মে। কারণ বসন্তের শেষ বর্ষণের পর আবহাওয়া শুকনো হলে ট্যাংক আর কামান চালানো সহজ হয়ে উঠবে।

অন্যদিকে, প্রিগোজিন একজন সেনা জেনারেলকে নিয়োগ করেছেন, যাকে সম্প্রতি লজিস্টিক প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই কর্নেল জেনারেল মিখাইল মিজিন্তসেফ গত বছর ইউক্রেনের দক্ষিণে বন্দর শহর মারিউপোলে বোমাবর্ষণের সময় কুখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন ‘মারিউপোলের কসাই’ নামে। এক বছর আগে রাশিয়া শহরটির দখল নেয়। অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তাকে ওয়াগনারের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে এবং সেখান থেকে বাখমুতের বিভিন্ন অবস্থানে যেতে দেখা গেছে। প্রিগোজিন আগে বলেছিলেন, তিনি মিজিন্তসেফকে ওয়াগনার গ্রুপের এক কমান্ডারের ডেপুটি পদে নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন। কারণ এই জেনারেল ভাড়াটে সেনাদের জন্য গোলাবারুদ সরবরাহে ভাল কাজ করেছেন এবং দাগী কারাবন্দিদের ওয়াগনার সেনাবাহিনীতে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছেন।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা