Saturday, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

চীনের নতুন মানচিত্র নীতি কি অস্বস্তিকর হবে রাশিয়ার জন্য?

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : চীনের সরকার নতুন যে মানচিত্র নীতি নিয়েছে তা নিয়ে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির নতুন দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশ। তারা বলছেন, নতুন এই নীতির জেরে এই মুহূর্তে চীনের সবচেয়ে ঘনিষ্ট মিত্র রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হতে পারে দেশটির।

চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এখন থেকে চীনের মানচিত্রে দেশটির ভূখণ্ডের অন্তর্ভূক্ত সব এলাকার নামের পাশে ব্র্যাকেটে চীনা ভাষায় ওই অঞ্চলের স্থানীয় নাম ও অঞ্চলটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণী থাকবে। অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকের মতে, নতুন এই পরিকল্পনা চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দেশটির তিক্ততা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

কারণ চীনের সঙ্গে পানি ও স্থল সীমান্ত আছে ২০টিরও বেশি দেশের এবং প্রায় প্রত্যেক প্রতিবেশীর সঙ্গেই সীমান্ত নিয়ে বিবাদ আছে দেশটির। যেমন— দক্ষিণ চীন সাগরের স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে ফিলিপাইনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চীনের দ্বন্দ্ব চলছে, তাজিকিস্তানের কিছু অংশ নিজেদের বলে দাবি জানিয়ে আসছে চীন, মধ্য এশিয়ার অপর দেশ কাজাখস্তানের ৩ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের দখলে রেখেছে এবং লাদাখ ও হিমাচল প্রদেশের বিভিন্ন এলাকার দখলিস্বত্ত্ব নিয়ে গত ২ বছর ধরে ভারতের সেনাবাহিনীর সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ চলছে চীনের সেনাবাহিনীর।

সীমান্তবর্তী বিবাদপূর্ণ এলাকাগুলোকে নিজেদের বলে দাবি করার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতেই মানচিত্র সম্পর্কিত নতুন নীতি চীন গ্রহণ বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে— নতুন এই নীতির ফলে বর্তমানে চীনের সবচেয়ে ঘনিষ্ট মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে কি টানাপোড়েন শুরু হবে দেশটির? কারণ রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরশহর ভ্লাদিভস্তককে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চীন। চীনের নতুন মানচিত্রে ভ্লাদিভস্তকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হাইশেনওয়াই’।

এই ব্যাপারটিই চীন-রাশিয়ার বন্ধুত্বের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট। কারণ ভ্লাডিভস্তক একাধারে রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর এবং দেশটির পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক এবং পর্যটনের কেন্দ্র। চীনের মানচিত্রে ভ্লাদিভস্তককে হাইশেনওয়াই বলে উল্লেখ করায় পশ্চিমা, জাপাডনি ও ইউক্রেনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেক রুশ। তাদের অভিযোগ, মানচিত্রে অন্তর্ভূক্তির মধ্যে দিয়ে ভ্লাদিভস্তককে পরক্ষোভাবে নিজের বলে দাবি করেছে চীন। তবে রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা এ প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু বলেননি।

তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের অপর অংশের মতে, ভ্লাদিভস্তক বা হাইশেনওয়াই নিয়ে চীন রাশিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ ১৯৯১, ১৯৯৪ এবং ২০০৪ সালে তিনটি সীমান্ত চুক্তি হয়েছে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে। এসব চুক্তির ফলে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া আরগুন, আমুর ও উসারি— এ তিন নদীর তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকার দখলিস্বত্ত্ব ভোগ করছে চীন।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা