Friday, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

গ্রীস প্রবাসী স্বামীকে ছেড়ে ইতালি প্রবাসী প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শরীয়তপুর সদর উপজেলায় ওই নারী প্রবাসী প্রেমিকের বাড়ির সামনে বসে অনশন করার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে তাকে দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে।

মফিজুর রহমান রিপন:মোবাইল ফোনে প্রেমের জেরে গ্রীস প্রবাসী স্বামীকে তালাক দিয়ে বিয়ের দাবিতে ইতালি প্রবাসী প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করে শরীয়তপুরে আলোচনায় এসেছেন এক গৃহবধূ।

অভিযুক্ত প্রেমিক শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের দাঁতপুর উত্তর ভাষানচর গ্রামের নুরুল হক ব্যাপারী।এর আগেও ওই নারী তিনবার নুরুল হকের বাড়িতে এসেছিলেন বলে জানায় স্থানীয়রা।

নুরুল হকের পরিবারের সদস্যরা জানায়, নুরুল হক ২০১০ সালে কাজের সন্ধানে জর্ডান যান। পরে সেখান থেকে লিবিয়া যান। লিবিয়া থেকে ২০২০ সালের জুন মাসে ইতালি পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি ইতালি রয়েছেন।

বিয়ের দাবিতে অনশনকারী ওই নারী জানায়, জেলার নড়িয়া পৌরসভার শালাল বাজার এলাকায় নুরুল হকের বোন সাবিনার শ্বশুরবাড়ি।একই এলাকায় ভাড়া থাকতেন তিনি।পাশাপাশি বসবাস করায় তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে নুরুল হকের বোন সাবিনার।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নুরুল হক লিবিয়া থাকাকালীন ওই নারীর মুঠোফোনের ইমোতে ভিডিও কলে নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলতেন বোন সাবিনা। তখন নুরুল হকের সঙ্গে ওই নারীর মাঝেমধ্যে কথোপকথন হতো। কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তিনি আরও বলেন, ২০১১ সালে ১৭ জুলাই নড়িয়া বিঝারি কান্দাপাড়া গ্রামে আমার বিয়ে হয়। স্বামী গ্রিসে থাকেন। তাদের নয় বছরের একটি ছেলে আছে। স্বামীর আচার আচরণ খারাপ হওয়ায় স্বামীর প্রতি আমার ধীরে ধীরে আগ্রহ কমতে থাকে। নুরুল হক দেখতে সুন্দর, সুন্দর করে কথা বলে। তাই আমার আর নুরুল হকের মধ্যে ভালোবাসা গভীর হতে থাকে।
তিনি বলেন, ‘নুরুল হক মোবাইলে বলেছে আমাকে ছাড়া সে বাঁচবে না। স্বামীকে তালাক দিলে নুরুল হক আমাকে বিয়ে করবে। আমি ওর কথা মতো নিজের স্বামীকে তালাক দিয়েছি। হঠাৎ একদিন আমাকে ফোনে বিয়ের কথা বলে নুরুল হক। আর তার গ্রামের ঠিকানা দেয়। আমি তাদের বাড়িতে যাই, পরিবারের সকলের সঙ্গে আমার পরিচয়ও হয়। আমাকে ফোনে বিয়ে করবে বলে জন্ম নিবন্ধন, দুই কপি ছবি ও পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে তার ভাই আমিনুল হক ব্যাপারীর কাছে যেতে বলেন।’

ওই নারী আরো বলেন, ‘আমি সদরের আংগারিয়া বাজার গিয়ে আমিনুলের দোকানে এগুলো দিয়ে নুরুল হকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে একটি ফর্মে স্বাক্ষর দিই। কিছুদিন পর নুরুল হকের কাছে কাবিন নামা চাইলে তিন মাস পরে পাব বলে জানায়। এছাড়া জমি কিনবে বলে নুরুল আমার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা চায়। আমি দুই দফায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিই। টাকাটা আমিনুলের দোকানে গিয়ে দিয়ে আসি। আবারও কাবিননামা চাইলে এখন নুরুল হকসহ তার পরিবার বলছে, আমাকে তারা চেনে না। ইতালি থেকে নুরুল হকও সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বাধ্য হয়েই আমার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ওর বাড়িতে উঠেছি।’

তিনি বলেন, এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আমি নুরুল হকের বাড়িতে আসি। তখন তার ভাই আমিনুল, বোন তানজিলাসহ বেশ কয়েকজন আমাকে মারধর করে। আমি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। পরে সদরের পালং মডেল থাকায় একটি অভিযোগ করি।
ওই নারী আরও বলেন, নুরুল হক আমাকে বিয়ে করবে বলে তার ওয়াদা রাখতে আমার স্বামীকে তালাক দিয়েছি। এখন নিজের বাড়িতে উঠতেও দিচ্ছে না। আমি সব হারিয়েছি। নুরুল হক বিয়ে না করলে, আমি এ জীবন রাখব না। যদি নুরুল হকের পরিবার আমাকে মেনে না নেয় তাহলে আমি এই বাড়িতেই আত্মহত্যা করবো।

তবে নুরুল হকের বোন তানজিলা বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতো ওই নারী। ভাইকে বলেছে তার বিয়ে হয়নি। এখন জানতে পারি তার বিয়ে হয়েছে। একটি ছেলেও আছে। ওই নারী আমার ভাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এখন আমাদের বাড়িতে এসেছে। সে কোন টাকা পয়সা আমাদের দেয়নি।

শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, বিয়ের দাবিতে অনশনে বসে আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দেওয়ায় নুরুল হকের বাড়ি থেকে নারীকে আটক করে থানায় এনে তার বাবাকে খবর দিয়ে তুলে দিতে চাইলে সে তাকে নিতে অসম্মতি জানায়।ওই নারীর বাবা বলেছেন, গ্রীস প্রবাসী খুবই ভালো ছেলের সাথে অনেক টাকা পয়সা খরচ করে বিয়ে দিয়েছি। একটা নাতি আছে। এর পরেও যে মেয়ে নিজের স্বামীকে তালাক দিয়ে এমন ঘটনা ঘটায় তাকে মেয়ে হিসেবে স্বীকার করি না। ওর ভালো মন্দ আমার দেখার কিছুই নেই। মেয়েটি যেহেতু আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে তাই তাকে ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে সোপর্দ করি। এর আগে মেয়েটি থানায় একটি অভিযোগ করে যে বিয়ের প্রলোভনে নুরুল হক তার স্বামীকে তালাক করিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। কিন্তু তদন্ত করে বা সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় কোনও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

-সময় নিউজ  এর সৌজন্যে 

ইউরোপ বাংলা

ইউরোপ বাংলা

একজন ফ্রিল্যান্স রাইটার, ব্লগার, এডুকেশনাল কনসালট্যান্ট, ক্যারিয়ার কাউন্সিলর, উদ্যোক্তা।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা