ডেস্ক রিপোর্ট : আমেরিকার সিটিজেনশিপ অ্যাক্টে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এর ফলে আমেরিকায় অবৈধভাবে থাকা মানুষেরা প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করার ও কাজ করার সুযোগ পাবে এবং পরে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার জন্য সময় লাগবে আট বছর। প্রথম পাঁচ বছর তারা থাকতে পারবে ও কাজ করতে পারবে। পরের তিন বছরের মধ্যে সিটিজেনশিপ আবেদন করে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে কিংবা যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন, তারা সেসব সুযোগ পাবেন না।
আরও পড়ুনঃ যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড ইস্যুতে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেন বাইডেন
কারণ নতুন আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, যারা বৈধ কাগজপত্রহীন রয়েছেন, তাদেরকে এই সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই কোনো ধরনের অপরাধ করেনি, এমন হতে হবে এবং তারা নিয়মিত ট্যাক্স ফাইল করেছে সেই নথিপত্র থাকতে হবে। যখন যেসব নথিপত্র প্রয়োজন হবে, সেগুলো তাদেরকে দিতে হবে। এ ছাড়া সবার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হবে। ১৮ ফেব্রুয়ারি সিটিজেনশিট অ্যাক্ট ২০২১ নামে একটি বিল উত্থাপন করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। এটি হাউস ও কংগ্রেসে পাস হলে এই আইনের বলে বেশি সুবিধা পাবেন ড্রিমার এবং কৃষি খাত ও খামারের কাজে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা। এ ছাড়া ছোট বয়সে যারা বাবা-মায়ের সাথে এ দেশে এসেছেন কিন্তু তাদের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই, তারাও এই সুবিধা পাবেন।
নতুন আইনটি হলে যেসব শিশু এ দেশে জন্ম নিয়েছে কিন্তু তার বাবা কিংবা মাকে পরবর্তীতে ডিপোর্টেশন করা হয়েছে, সেসব ব্যক্তিদের পুনঃপ্রবেশের সুযোগ তৈরির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবারভিত্তিক ভিসা সহজ ও দ্রুত হতে পারে।
ডাইভারসিটি ভিসা ৫৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার করা হবে। রিফিউজিদের জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করার পাশাপাশি সিটিজেনশিপ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হবে। বিলটি পাস হলে এইচ ওয়ান বি ক্যাটাগরিতে কোটা বাড়তে পারে এবং টেকনোলজির উন্নতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে।
এ ছাড়া অ্যাসাইলাম ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে। অ্যাসালাইমের কোটা ও পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে। ১ বছরের মধ্যে ফাইলিংয়ের ডেডলাইন তুলে নেওয়ার কথাও বলা হয়। সব মিলিয়ে অনেক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন।
বাইডেন প্রশাসন চাইছে তারা দেশের ভেতরে থাকা অবৈধদের বৈধ করতে পাশাপাশি নতুন করে অবৈধদের এই দেশে আসা যাতে বন্ধ করা সম্ভব হয়, সেই জন্য তারা সীমান্তে আরো কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে।
সে জন্য ইতিপূর্বে যেসব পথ দিয়ে অবৈধভাবে মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, পাশাপাশি আগামী দিনে যেসব পথ দিয়ে এ দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করার সুযোগ রয়েছে, সেসব প্রবেশপথ দিয়ে যাতে কেউ এ দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যারা এ দেশে থেকে অবৈধ হয়ে গেছেন, ওই সব মানুষকে আইনিভাবে বৈধ অবস্থান করে দিতে চাইছে। এর আগেও ইমিগ্রেশন আইনে বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এসেছে কিন্তু এবার বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। যদিও আইনপ্রণেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, এটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হলে আগামী দিনে এ দেশে অনেক মানুষ অবৈধভাবে আসার চেষ্টা করবে।
বিলটি পাস করার জন্য ডেমোক্র্যাটরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। রিপাবলিকানরা এই বিল পাস করার জন্য সমর্থন দিলে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে এই প্রশাসনের পক্ষে। সমর্থন না দিলে এটি সমস্যায় পড়তে পারে। এদিকে রিপাবলিকানরা এখনো বিলটির বিরোধিতা করছে না। তবে তাদের কেউ কেউ চাইছেন, বিলে যেসব বিষয় আনা হয়েছে তা আলাদা করে পৃথক বিষয়ে বিল আনতে। এতে একটির কারণে বা একাধিক বিষয়ের কারণে পুরো বিলটি আটকে থাকবে না। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি সোমা সায়ীদ বলেন, সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট বিল পাস হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে ডাকাতে যারা পড়েছে তারা। যত সংখ্যক অবৈধদের বৈধ করার কথা বলা হচ্ছে, তাতে ড্রিমারদের জন্য এটা সুফল বয়ে আনবে। তবে বাংলাদেশিদের জন্য খুব বেশি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে না। কারণ ড্রিমার বাংলাদেশি তেমন নেই। এ ছাড়া কৃষিতেও বাংলাদেশিরা কম কাজ করে। তবে আইনের যে পরিবর্তন হচ্ছে তাতে কিছুটা সুফল তো বাংলাদেশিরা পাবেই।
ইউরোপ বাংলার আরও খবরঃ