Thursday, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

ইউরোপ অভিমুখী মাইগ্রেন্টদের যাত্রায় করোনার প্রভাব

ইউরোপ বাংলা ডেস্কঃ প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ  প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা খাদ্য সহজলভ্যতার জন্য পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাড়ি জমাতো এবং বসতি করে তুলত। যুগের বিবর্তনে আজ ও তা বজায় আছে, তবে পৃথিবীটা টুকরো টুকরো হয়ে রাষ্ট্র নামক একটি পরিধি তৈরি করার কারণে এখন আর কেউ চাইলেই এক স্থান হতে অন্য স্থানে গিয়ে বসবাস শুরু করতে পারে না এর জন্য প্রয়োজন নানান দলিলপত্রাদি।স্বাভাবিক নিয়মে মাইগ্রেশনের প্রক্রিয়া চালু থাকলেও সকল শ্রেণীর মানুষের পক্ষে সে যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব হয় না। অনগ্রসর জনগুষ্ঠি  যেমন:  যুদ্ধ , সামাজিক, সংখ্যালঘু  যাদের জীবন হুমকি স্বরূপ বা যেকোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অথবা অর্থনৈতিক ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সাধারনত প্রতিবছরই উন্নত দেশগুলো অভিমুখী অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ দিন দিন বাড়ছে।

প্রতিটি দেশই তাদের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য দেশের সীমানায় অস্ত্রসহ সুসজ্জিত সৈন্যদল প্রস্তুত করে রাখে। তবে তাই বলে থেমে নেই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সেই প্রাচীন যাত্রা বিভিন্ন কৌশলে চৌকস সীমান্ত বাহিনী কে ফাঁকি দিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গহীন জঙ্গল বা অথৈই সমুদ্রে পাড়ি জমায়, কেউ সফল হয় আবার কারো ভাগ্যে জোটে সমুদ্রে ডুবে বা জঙ্গলে ক্লান্তিময় দেহে করুণ মৃত্যু।

তেমনি ইউরোপ অভিবাসীদের জন্য বিশ্বের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় আশ্রয়স্থল এবং সেই অনুযায়ী প্রতিবছরই হাজার হাজার অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করে তবে গত ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ২০২০ সালে অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ কমেছে । গত জানুয়রি ২০২০ সাল থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত সর্বমোট ৩৬ হাজার ৪০০ জন এর মত অভিবাসী অনুপ্রবেশ করেছে যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে মহামারীর কারণে পূর্ব এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অভিবাসী অনুপ্রবেশের হার কমেছে, গত জুন মাসে সর্বমোট ৪ হাজার ৫০০  জন অভিবাসী অনুপ্রবেশ করেছে , গত মে মাসে ও একই পরিমাণ অনুপ্রবেশ করেছেছিল।

আরো পড়ুন পর্তুগালে আসছে এন্টি কোভিড-১৯ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন

মোট চারটি রুটে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ ঘটে উক্ত চারটি রুট হচ্ছে :  পূর্ব, পশ্চিম এবং মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, স্থলপথে পশ্চিম বলকান অঞ্চল।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের গত জুন মাসে এই রুটে মাত্র ২০০ জন অভিবাসী অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং গত মে মাসে ও ২০০ এর কাছাকাছি সংখ্যা ছিল যা ২০০৯  সাল থেকে একই সময়ে যে কোন মাসের তুলনায় রেকর্ডসংখ্যক কম। ২০২০  সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ রুটে সর্বমোট ১১ হাজার ৯১২  জন অভিবাসী অনুপ্রবেশ করেছে যার বেশিরভাগই আফগানিস্তান এবং  সিরিয়ান নাগরিক।

মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অভিবাসীদের অনুপ্রবেশের সংখ্যা জুন মাসে মে মাসের তুলনায় ৫০  শতাংশ কম হয়েছে তবে সর্বমোট ৭ হাজার  ১৮৬ জন অভিবাসীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে , যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গত বছরের তুলনায় এ বছরে  অনুপ্রবেশের সংখ্যা বেড়েছে , এই রুটে অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বেশিরভাগ অভিবাসী তিউনিশয়া এবং বাংলাদেশী নাগরিক।

পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের এই রূটে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪ হাজার ৪৫১  জন অভিবাসী অনুপ্রবেশ সনাক্ত করা হয়েছে জাগত ২০১৯  সালের একই সময়ের তুলনায় যা  ৫৬  শতাংশ কম।
তবে গত জুন মাসে ৭৫০ জন অভিবাসী অনুপ্রবেশ চিহ্নিত করা হয়েছে যা গত মাসের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। এই রুটে অনুপ্রবেশকারী অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই আলজেরিয়ান এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মরক্কোর নাগরিক।

পশ্চিম বলকান অঞ্চলে পরিস্থিতি একটু ভিন্ন এই রুটে এ ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে ৯ হাজার ২৫৬ জনের মত যা গত বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ করেছে। জুন মাসে ২০৫০ জন অভিবাসী অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সনাক্ত করা হয়েছে যা গত মে মাসের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি তবে  গত ২০১৯ সালের তুলনায় তিনগুণ। এই রুটের অভিবাসীদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ সিরিয়ান এবং ১৭ শতাংশ  আফগানিস্তানের নাগরিক।

এই অভিবাসীদের উপচে পড়া চাপের জন্য উন্নত দেশগুলো অনেকাংশেই দায়ী কেননা তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ-বিগ্রহ বেড়েই চলেছে । যদিও ইউরোপ কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধের পৃষ্ঠপোষকতা করলেও তবে সামষ্টিক বিবেচনায় অন্যান্য দেশের বা অঞ্চলের তুলনায় যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত  অঞ্চলের মানুষের জন্য বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ড দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। এবং অনুন্নত দেশের সামাজিক নিরাপত্তায় বজায় রাখার জন্য আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করছে। এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারী প্রকৃত শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান করে স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ করে দিচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে ইউরোপ অভিবাসীদের পছন্দের কারণ হচ্ছে-ে কোনভাবে ইউরোপের সীমানায় প্রবেশ করতে পারলে কোন ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকলে , ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর সকল সদস্য দেশ এবং ইউরোপের প্রায় অন্য দেশগুলোও মানবিক কারণে অভিবাসীদের বসবাস করার সুযোগ দেয়, সে কারণেই অভিবাসীদের অন্যতম লক্ষ্য ইউরোপ। তবে মহামারিীর কারনে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আকাশ এবং সড়ক  যোগাযোগ  বন্ধ থাকায় অনুপ্রবেশকারীদের হার হ্রাস পেয়েছে।

ফরিদ আহমেদ পাটওয়ারি

ফরিদ আহমেদ পাটওয়ারি

আমি প্রবাসী বাংলাদেশী হিসেবে পর্তুগালে বসবাস করছি। এখানে জীবন-জীবিকার পাশাপাশি পর্তুগিজ এবং বাংলাদেশ কমিউনিটিতে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত রয়েছি। পর্তুগালের পথচলা ২০১৫ সালে তবে এর পূর্বে বাংলাদেশে একটি স্বনামধন্য রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত ছিলাম। শিক্ষাজীবন ঢাকা কলেজ থেকে ২০০৪ সালে স্নাতক ডিগ্রি এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বলাখাল জে এন হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক । বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স তাছাড়া শিক্ষাজীবন এবং কর্মজীবনে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, ব্যবস্থাপনা, আইটি সম্পর্কিত বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে যুক্ত ছিলাম। ২২ বছরের কর্মজীবন কেটেছে মিডিয়া, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, আইটি,  সেলস এন্ড মার্কেটিং এবং মার্চেন্ডাইজার হিসেবে। ফটোগ্রাফি, লেখালেখি, ভ্রমণ এবং টেকনোলজির প্রতি আগ্রহ রয়েছে শখ ও বলা যায়। এরমধ্যে লেখালেখিটা শক্ত হাতে ধরেছি, সুন্দর একটা পরিবর্তন এর আশায়। জীবনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গঠনে মানুষের সহযোগিতায় কাজ করে যাওয়া।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা