Monday, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

আফ্রিকার ফ্যাশন ব্রিটেনে স্বীকৃতি পাচ্ছে

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : আফ্রিকার ফ্যাশন নিয়ে ব্রিটেনে এর আগে কখনো এতো বড় প্রদর্শনী হয়নি। ক্রিস্টিন চেচিনস্কার নেতৃত্বে সেই প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে। তিনি মনে করেন, ‘এই মুহূর্তে ‘আফ্রিকা ফ্যাশন’ আয়োজনের কারণ হলো শিল্প, সংগীত বা ফ্যাশনের ক্ষেত্রে আমরা গোটা বিশ্বের ওপর আফ্রিকার প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। আমার মতে, নিজস্ব সংজ্ঞা, নিজস্ব সংকল্পের সেই তাগিদ থেকে বাকি বিশ্বও শিক্ষা নিতে পারে।’

প্রথাগত কাট, খাঁটি রেশমের কাপড় ও রঙিন প্যাটার্ন, লন্ডন ভিত্তিক ডিজাইনার রেনে ম্যাকডনাল্ডের ফ্যাশনের বার্তা অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘আফ্রিকাকে সভ্যতার আঁতুড়ঘর হিসেবে ভাবলে এটাও মানতে হবে, যে অনেক অর্থে সেই মহাদেশ ফ্যাশনেরও জন্ম দিয়েছিল। আমার অন্তরাত্মা অত্যন্ত আফ্রিকান। অনেক রং ও প্রিন্ট দেখে আমি বড় হয়েছি। বিভিন্ন রংয়ের মধ্যে সংঘাত ঘটানো আমাদের জন্য বেশ স্বাভাবিক। যে কোনো দুটি রঙের মেলবন্ধনের কোনো নিয়ম নেই, পরে নিলেই হবে।’

রেনে ম্যাকডনাল্ড তানজানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শিশু বয়সে ব্রিটেনে আসার পর থেকেই তিনি ফ্যাশন সম্পর্কে মুগ্ধ ছিলেন। তাঁর মা সবকিছু নিজেই সেলাই করতেন। উচ্চশিক্ষার শেষে ফ্যাশন স্টাইলিস্ট হিসেবে কাজের সময় তিনি নিজের এক স্বপ্ন পূরণ করেন।

২০১৮ সালে তিনি ‘লিসু’ নামে নিজের ব্রান্ড চালু করেন। নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে রেনে বলেন, ‘আমাকে আগেও এই ব্র্যান্ডের সংজ্ঞা দিতে কিছু শব্দ বলতে বলা হয়েছে। আমি বলবো সাহসি, অনবদ্য, রঙিন এবং খুশিতে ভরা। মনোবিজ্ঞানীরা সত্যি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, যে রং আমাদের মন আরো ভালো করে তোলে। অর্থাৎ ভাসবাসা ও আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়াই আসল কথা।’

তাঁর ডিজাইন সফলভাবে আফ্রিকা ও ইউরোপের সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধ গড়ে তুলেছে এবং অত্যন্ত জনপ্রিয়ও বটে। তাঁর অনুরাগীদের মধ্যে হলিউড ও অন্যান্য তারকাও আছেন। যেমন ব্রিটিশ টেলিভিশন উপস্থাপক এজে উদুদু, ন্যাওমি ওয়াটস, গোয়েনেথ প্যালট্রো, হেলেন মিরেন এবং ট্যান্ডিওয়ে নিউটন।

রেনে ম্যাকডনাল্ড বলেন, ‘মহামারির সময়ে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ বিষয়টি এতো গুরুত্ব পেয়েছিল, যে সবাইকেই অন্য বিষয় ছেড়ে শুধু সে দিকেই মনোযোগ দিতে হয়েছিল। এখনো বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে অনেক সময় লাগবে। তবে সেই সময় আমার জন্য খুবই ভালো ছিল। আমার মতে, বেশিরভাগ আফ্রিকান ডিজাইনার আমার সঙ্গে একমত হবেন। কারণ ২০২২ সালে ভি অ্যান্ড এ আফ্রিকান ডিজাইনারদের নিয়ে এক প্রদর্শনী আয়োজন করেছে।’

লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে ‘দ্য আফ্রিকা ফ্যাশন এক্সিবিশন’ বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে আফ্রিকার ফ্যাশনের বিবর্তন তুলে ধরেছে। আফ্রিকার ২০টিরও বেশি দেশের ৪৫ জন ডিজাইনারের সৃষ্টিকর্ম সেখানে শোভা পেয়েছে। রেনে বলেন, ‘সাংস্কৃতিকভাবে এত সমৃদ্ধ এক মহাদেশের সৃজনশীলতা অবশেষে উদযাপনের মুহূর্ত এসেছে বলে আমি বেশ রোমাঞ্চ বোধ করছি। প্রিন্ট, প্যাটার্ন থেকে ইতিহাস, কাপড়ের অর্থ, বিভিন্ন দিক থেকে এমন উৎসবের সময় একেবারে ঠিক।’

দুই মহাদেশেই বড় হবার সুযোগ এই ডিজাইনারের কাছে বড় সৌভাগ্য মনে হয়। লন্ডনে বাসা বাঁধা সত্ত্বেও তিনি নিয়মিত আফ্রিকায় নিজের শিকড়ে ফিরে যাবার তাগিদ অনুভব করেন। সেই অনুভূতি ব্যাখ্যা করে রেনে ম্যাকডনাল্ড বলেন, ‘কারণ সেই জায়গার সঙ্গে আমার এত নিবিড় যোগাযোগ৷ মহামারির সময় বাদ দিলে বছরে অন্তত একবার আমি তানজানিয়ায় যাই। আমার অন্তরত্মাকে পুষ্টি জোগাতে ভবিষ্যতে আরও ঘনঘন সেখানে যেতে চাই।’ তানজানিয়ায় নিজস্ব ফ্যাশন পণ্যের উৎপাদন, সেখানে কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং স্থানীয় কারিগরদের পৃষ্ঠপোষকতা রেনে ম্যাকডনাল্ডের বড় স্বপ্ন।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা