Monday, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারবিষয়ক প্রস্তাব গৃহীত

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো ‘মিয়ানমারেরপরিস্থিতি’ বিষয়ক একটি প্রস্তাব আজ বৃহস্পতিবার ভোরে গৃহীত হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জানায়, এতে মিয়ানমারে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জরুরি অবস্থা, বন্দি মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। প্রস্তাবের উপর ভোট আহবান করা হলে তা ১২-০ ভোটে অনুমোদিত হয়।

চীন, ভারত ও রাশিয়া ভোটদানেবিরত ছিল। ভোটদান শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, গ্যাবন এবং নরওয়ে তাদের বক্তব্যে রেজুল্যুশনটিতে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি করণের প্রশংসা করে এই সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তাপরিষদের জোরালো ভূমিকার দাবি জানান।
যুক্তরাষ্ট্র তার বক্তব্যে প্রস্তাবটি উত্থাপন করার জন্য যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জানায়।

বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জানায়, এই প্রস্তাব রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গ সংস্থার শক্তিশালি সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে গৃহীত রেজুল্যুশনটি রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আরো সুসংহত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ২০১৭ সালে ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাসহ এ পর্যন্ত ১.২ মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করেন এবং শুরু থেকেই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের নিমিত্ত্বে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে জোরালো দাবি উত্থাপন করে আসছেন। এই প্রস্তাবনা অনুমোদিত হওয়ার ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেল। একই সাথে এটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের এতদসংক্রান্ত অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরো শক্তিশালি ও ত্বরান্বিত করবে।

প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। পরিষদ রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবসনের নিমিত্ত্ব অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহবান জানায়। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে, সে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হয়।

এছাড়া, এ সমস্যার সমাধানে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ২০২১ সালে গৃহীত পাঁচ দফা ঐক্যমত্যের দ্রুত ও পূর্ণ বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং এর বাস্তবায়নে জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হবে কি না সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত কে আগামি ১৫ মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন প্রস্তাবটিতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী ও অস্থায়ী বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সাথে প্রয়োজনীয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যাতে প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন । উল্লেখ্য, প্রস্তাবটির ‘পেন হোল্ডার (মূল স্পন্সর)’ নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য। বিগত তিনমাস ধরে আলোচনা শেষে এটি নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জানায়, নিরাপত্তা পরিষদের ডিসেম্বরের সভাপতি ভারত এবং তাদের সভাপতি থাকাকালীন সময়েই প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হলো। এর ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে এক অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় সফল হলো বাংলাদেশ।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা