ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : দেশে হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন দিয়ে মানুষকে বোকা বানাতে চাচ্ছে। কিন্তু এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। শনিবার বরিশালে বিভাগীয় মহাসমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বর্গীর (লুটতরাজ প্রিয়) রূপ নিয়েছে। ভোটের অধিকার নিয়ে একবার নয়, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে। তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে এটা হয় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে তারা। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরির ফায়দা আঁটছে। নতুন বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। কিন্তু এই হাসিনা-এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একবার ভোট চুরি করে নাই। ওরা যখনই আসে তখনই চুরি করে। আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে দুটি জিনি আছে, একটা হলো চুরি আরেকটা হলো সন্ত্রাস। ’১৪ সালে ভোট চুরি করেছেন, ১৮ সালে ভোট চুরি করেছেন, এখন আবার একটা ভোট চুরির নতুন করে নির্বাচন দিয়ে কোনো রকমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন। নতুন নির্বাচন কমিশন তাদের দিয়ে এমন একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে নির্বাচন একেবারে নিরপেক্ষ হবে। ইভিএমএ ভোট এসব বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের কথা পরিস্কার-হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আগে পদত্যাগ করতে হবে তাকে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং সংসদ বিলুপ্ত করে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং সেই কমিশন নতুন করে নির্বাচন করবে। নির্বাচন করে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।
২০০৮ সালে মাথায় হিজাব দিয়ে এসে বলেছিল, আমি ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবো। কত টাকায় চাল খাওয়াচ্ছে এখন? ঘরে ঘরে চাকরি দেবে বলেছিল, দিয়েছে আওয়ামী লীগের ছেলেপেলেদের। কিন্তু প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ লক্ষ করে টাকা নিয়েছে। আর বলেছিল বিনা পায়সায় সার দেবো। সেই সারের এখন দাম আমাদের সময় যা ছিল- তার থেকে তিনগুণ বেশি। বিদ্যুৎ দিয়ে খুব ঢাক-ঢোল পিটিয়েছেন। ঢাকার হাতিরঝিলে আতশবাজি ফুটলো বিদ্যুতে সব স্বয়ংসম্পন্ন হলো বলে। সেই বিদ্যুত এখন নাই। আজকে সকালে আমি হোটেলে ছিলাম। দেখলাম কমপক্ষে ১০ বার বিদ্যুৎ এলো-গেলো। এরা এই বিদ্যুতে চুরি করেছে। হাজার হাজার টাকা চুরি করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দিয়েছে। একটা জায়গা নেই, একটা জায়গা খুঁজে পাবেন না, যেখানে তারা চুরি করে নাই।
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে। এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না! কিন্তু বাস্তবে গেলে কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া যায় না। আমরা মুক্তি চাই, এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একে একে আমাদের সমস্ত অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। আপনারা জানেন আমরা একটি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসে। সংবিধানেও তাই ছিল। কিন্তু এরা কি করেছিল- ১৯৭৫ সালে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছিল। আবার এখন এই ১৫ বছর ধরে সেই একই স্বপ্ন তারা দেখছেন এবং তারা কাজ করছে একই ভাবে। তারা এখানে একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। কিন্তু একটা খোলস রাখতে চায় গণতন্ত্রের।
বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগীয় মহা সমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মীর্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের দেশের আলেম-ওলামারাও রক্ষা পাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হচ্ছে। কেউই নিরাপদ নয়। তারা সমস্ত টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। বলছে বৈশ্বিক সংকট, ডলারের সংকট, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। তো তখন মনে ছিল না, যখন টাকাগুলো চুরি করে পাচার করেছিলেন। বিদেশে পাঠাচ্ছিলেন। কানাডা, মালয়েশিয়া, ইউরোপে বাড়ি বানাচ্ছিলেন, তখন মনে ছিল না। আমাদের নেতা হিসাব দিয়েছেন, কতটাকা পাচার করেছেন কত ভাবে।