Saturday, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

প্রেসক্লাবে তিন সন্তানসহ আত্মহত্যার চেষ্টা মায়ের

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : সাত বছর আগে দালালদের মাধ্যমে রূপগঞ্জের বরপা গ্রামের বাসিন্দা হান্নান সাউদের কাছ থেকে জমি কিনে দুই তলা বাড়ি করেন মোছা. শিরিন খান (৩৫)। অতিসম্প্রতি স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান সেই বাড়িটি দখল করে তিন সন্তানসহ তাকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই নারীর। শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতেই তিন বছরের মেয়েকে কোলে রেখে চারজন গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু পুলিশের বাধায় আত্মহত্যা করতে না পেরে সবাই মিলে ঘুমের ওষুধ সেবন করেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিরিন খান সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েও কোনও প্রতিকার পাইনি। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিই আত্মহত্যা করার।’ তিনি জানান, হান্নানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ও তার মেয়ে দুই দিন আগেও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন।

শিরিন জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। তার বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে এ এলাকায় থাকতেন। ২০১৫ সালে সহায়সম্বল যা ছিল তাই বিক্রি করে বরপা গ্রামে একটুকরা জমি কেনেন স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হান্নানের কাছ থেকে। জমিটি ক্রয় করে দুইতলা ভবনও নির্মাণ করেন। কিন্তু ছেলে-মেয়েদের নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারছেন না। স্বামী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ স্বামী যন্ত্রণা সইতে না পেরে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি কোথায় আছেন তাও জানেন না। ছোট ছোট দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে কোথাও ঠাঁই হয়নি। এমন যন্ত্রণা থেকে বাঁচতেই সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যা করে চিরদিনের মতো বিদায় নিতে ছেলেছিলেন তিনি।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান সাউদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ছেলে মাহফুজ রানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, আমার বাবা অসুস্থ। শিরিন খান আমার বাবার কাছ থেকে জমি কেনেন। কিন্তু আমার বাবা যাদের কাছ থেকে যেভাবে জমি কিনেছেন, সেইভাবেই শিরিনের কাছে জমিটি বিক্রি করে দেন। এখন শিরিনের সঙ্গে ঝামেলা চলছে দালালদের।

তিনি বলেন, আমার বাবার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বরং আমার বাবা ওই নারীকে বলেছেন, যেহেতু তিনি গরিব মানুষ, তাই তাকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দেবেন। শিরিন খান শুধু শুধু আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। এমন চলতে থাকলে আমরাও আইনি ব্যবস্থা নেব। মেয়ে শারমিন খান (১৬) ও সানজিদা খান (৩) এবং ছেলে ছেলে জহির খানকে (১০) নিয়ে শিরিন খান বর্তমানে ঢামেকের নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডের ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি। গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা চেষ্টার আগে ঘুমের ওষুধ সেবন করায় তাদের হাসপাতালে নিয়ে পাকস্থলি পরিষ্কার করার পর ভর্তি রাখা হয়েছে। তবে মেয়ে সাজিদা খানকে ঘুমের ওষুধ সেবন করানো হয়নি। সে সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ওই নারী আরও জানান, এ জমি উদ্ধারে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গণভবনেও যান তিনি। কিন্তু তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ না পেয়ে বাসায় ফিরে দুই দিন আগেও ফেসবুকে লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয়রা ও পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। স্থানীয়রা বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলেও কেউ সমাধান করতে পারেননি। শেষে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলেন হান্নান।

শিরিন বলেন, আমি বাড়িতে কাজ করেছি অনেক টাকা খরচ করে। আমি স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি। পুলিশকে জানালে তারা সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। হান্নান আমাদের আর বাড়িতে না যেতে বলেছে। জমির দলিলপত্র সব দিয়ে দিতে বলেছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো উপায় না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি। আমার আর কোনো উপায় নেই। আমার মেয়েটার ব্রেনে সমস্যা।

শিরিনসহ সবাইকে উদ্ধার করা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল-মোমেন জানান, জাতীয় প্রেসক্লাবসংলগ্ন পুলিশ বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে ওই নারী তার তিন সন্তানসহ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হঠাৎ তিনি তার ব্যাগ থেকে একটি কেরোসিনের বোতল বের করে নিজের শরীর এবং সন্তানদের শরীরে ঢালতে শুরু করেন। পাশ থেকে এটি দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাত থেকে বোতলটি নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তাদের পাঠানো হয় হাসপাতালে।

তিনি জানান, সম্ভবত ওই নারী হয়তো নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে সন্তানদেরসহ ঘুমের ওষুধ সেবন করে এসেছিলেন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে পাকস্থলি পরিষ্কার করানোর পর মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানা গেছে, সম্পদ নিয়ে কোনো বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূইয়া বলেন, হান্নান সাউদ নামে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নেই। আর ভুক্তভোগী নারী তার কাছে কখনও আসেননি। আমার কাছে এলে বিষয়টি আমি দেখব।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা