Friday, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

ট্রাকের সিলিন্ডারে কোটি টাকার ইয়াবা পাচার

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : অভিনব কায়দায় ট্রাকের সিলিন্ডারের মধ্যে ইয়াবা পাচারকালে এক লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ চক্রের ৩ জনকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৩। শনিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। জব্দ করা হয় ইয়াবা বহন করা ট্রাকটি। ট্রাকের তেলের ট্যাংকিতে বিশেষ কায়দায় এসব ইয়াবা লুকানো ছিল। উদ্ধার করা ইয়াবার দাম ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

রোববার (৭ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, শনিবার (৬ আগস্ট) রাতে যাত্রাবাড়ীতে অভিযান পরিচালনা করে ট্রাকের তেলের ট্যাংকিতে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় ১ লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবা ও ১টি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৩-৫৪২৮) জব্দ করা হয়। এ সময় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আমিনুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, হেদায়েত উল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।

খন্দকার আল-মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা টেকনাফ থেকে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পৌঁছে দিত। মূলত ট্রাকের মালিক সোহেলের নেতৃত্বে ৪-৫ বছর ধরে পরিবহন ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার করে আসছিল। পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও সহকারীকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের গাড়িতে ইয়াবা পরিবহনের জন্য প্রলুব্ধ করে থাকে।

তিনি জানান, ইয়াবা পাচার চক্রের সদস্য সংখ্যা ৭ থেকে ৮ জন। ট্রাকমালিক সোহেল ও গ্রেপ্তারকৃত আমিনুল টেকনাফের সিন্ডিকেট থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে। ইয়াবা সংগ্রহের পর সোহেলের নির্দেশে গ্রেপ্তারকৃত আমিনুল দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়। চকরিয়ায় একটি গ্যারেজে বিশেষ পদ্ধতিতে গাড়ির তেলের সিলিন্ডারের মধ্যে গোপন প্রকোষ্ঠ তৈরি করে। তার মধ্যে ইয়াবা লুকিয়ে পরিবহন করা হয়। এভাবে অভিনব কায়দায় তেলের ট্যাংকিতে ইয়াবা রাখার পর সোহেল, আমিনুল ও নুরুল ইসলাম প্রথমে ট্রাক নিয়ে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। চট্টগ্রাম আসার পর সোহেল গাড়ি থেকে নেমে যায়। এরপর আমিনুল, নুরুল ইসলাম ও হেদায়েতকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।

র‌্যাব জানায়, আসামিরা ইয়াবার চালানটি গাজীপুরে সরবরাহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তাদের ট্রাকে অন্য কোন মালামাল ছিল না। পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন চেকপোস্টে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায়, গাজীপুর থেকে মালামাল লোড করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসার জন্য তারা খালি ট্রাক নিয়ে গাজীপুর যাচ্ছে। ট্রাকের তেলের ট্যাংকিতে ইয়াবাগুলো লুকিয়ে রাখায় তারা নিশ্চিত ছিল যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশিতে ইয়াবার সন্ধান পাওয়া যাবে না।

র‌্যাব জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করতে পাশের দেশগুলো থেকে ইয়াবা টেকনাফে ডিলারের কাছে আসে। টেকনাফের ডিলার ও ঢাকার ডিলারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়াবা চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে বিশেষ কোড নাম্বার দিয়ে প্যাকেটজাত করা হয়। কোড নম্বর দেখেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ডিলাররা বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী চালান পৌঁছে দেয়।

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আমিনুল পেশায় একজন ট্রাকের হেলপার। সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। চট্টগ্রাম ট্রাক স্ট্যান্ডে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্য ট্রাকমালিক সোহেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় সোহেলের প্ররোচনায় সে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী ট্রাকে হেলপারের কাজ শুরু করে। ৪-৫ বছর ধরে ইয়াবা পাচার চক্রের সঙ্গে কাজ করছে। সে মূলত সোহেলের নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পৌঁছে দিতে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে থাকে। যখন কোন মাদকের চালান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় তখন আমিনুল ট্রাকের হেলপার হিসেবে উপস্থিত থাকে। মাদকের একটি চালান নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারলে আমিনুল চালান প্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা পেত।

নুরুল বান্দরবান এলাকায় মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে সোহেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। ট্রাকমালিক সোহেলের সহযোগিতায় সে ইয়াবা পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। ঘটনার দুইদিন আগে ইয়াবা পরিবহনের উদ্দেশ্যে সোহেল ও নুরুল টেকনাফ যায়। তখন আমিনুল ও হেদায়েত গাড়িতে হেলপার হিসেবে ছিল। টেকনাফের সিন্ডিকেট থেকে ইয়াবা সংগ্রহের পর ট্রাকের তেলের ট্যাংকিতে ইয়াবা বহন করে নুরুল ও সোহেল খালি ট্রাক চালিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। অতপর সোহেল আমিনুলকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে নেমে যায়। এরপর চট্টগ্রাম থেকে নুরুল ও হেদায়েত পালাক্রমে গাড়ি চালিয়ে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে আসে। নুরুলের গাড়ি চালনায় কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা