Thursday, মার্চ ২৮, ২০২৪

৩০ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয় শ্রীলঙ্কার

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়ার সামনে শ্রীলঙ্কার বেধে দেওয়া ২৫৯ রানের লক্ষ্যটা খুব বেশি বড় ছিল না। তবু ম্যাচটা চলে গিয়েছিল শেষ ওভারে। অস্ট্রেলিয়ার জয়, শ্রীলঙ্কার জয় কিংবা টাই, তিনটি ফলই সম্ভব ছিল তখন। স্নায়ুক্ষয়ী এই লড়াইয়ে শেষমেশ শ্রীলঙ্কাই হাসল শেষ হাসিটা, জিতল ৪ রানে। তাতে ৩০ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল লঙ্কানরা। শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ১৯ রান। অধিনায়ক দাসুন শানাকা নিজেই এলেন শেষ ওভারটা সামলাতে। শুরুর বলটায় রান নিতে দিলেন না ম্যাথিউ কুনেমানকে, চাপে ফেললেন অজিদের। এরপরের বলে দিয়ে বসলেন ফুল টস, পয়েন্ট দিয়ে তা সীমানাছাড়া করলেন কুনেমান। চাপটা তাতে ফিরে এলো স্বাগতিকদের ওপরই।

এরপর লেন্থ বদলালেন শানাকা। তবে লাভ হলো না তাতে। তার শর্টার লেন্থে করা তৃতীয় বলে দুই রান নিলেন কুনেমান; পরের বলটাও গেল একই লেন্থে, স্কুপ করে শর্ট ফাইন লেগের ওপর দিয়ে সীমানাছাড়া করলেন বলটা। সমীকরণটা নেমে এল দুই বলে ১০ রানে। পঞ্চম বলটা অফ স্টাম্পের একটু বাইরে ফুলার লেন্থে ফেললেন শানাকা। মিড অফের ওপর দিয়ে সে বলটাও সীমানাছাড়া করে বসলেন কুনেমান। শেষ বলে পাঁচ রান দরকার পড়লেও মোমেন্টাম বিচারে অজিরাই খানিকটা এগিয়ে ছিল বৈকি!

তবে শানাকা শান্তই থাকলেন, শেষ বলটা করলেন স্লোয়ার। কভারের ওপর দিয়ে সীমানাছাড়া করতে গিয়েও পারলেন না কুনেমান, ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে চারিথ আসালঙ্কার হাতে পড়লেন ধরা। তাতেই সিরিজে ফেরার পথ বন্ধ হয় অজিদের, শ্রীলঙ্কা মাতে সিরিজ জয়ের উল্লাসে।

অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের একটা বড় সময় ধরে ডেভিড ওয়ার্নারই দলের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, স্ট্রাইক রোটেশনের সঙ্গে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের যোগফলে একটা সময় অস্ট্রেলিয়াকে দেখাচ্ছিলেন অনায়াস জয়ের আশাই। শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। শুরুতেই হারিয়েছেন অ্যারন ফিঞ্চকে। তবে এরপরই পালটা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন ওয়ার্নার।

লঙ্কান বোলার মাহীশ থিকশানা শুরু থেকেই শর্টার লেন্থে বলের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। শুরুর দিকে সেটারই ফায়দা লুটছিলেন ওয়ার্নার। এরপর ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গা আক্রমণে আসতেই ওয়ার্নার বের করলেন সুইপ আর রিভার্স সুইপের অস্ত্র। সঙ্গী মিচেল মার্শও বারদুয়েক সফল চেষ্টা চালিয়েছেন রিভার্স সুইপের, দু’জন মিলে অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিয়েছিলেন ৫০ রানের জুটি। তবে দুনিথ ওয়াল্লাগের আঘাতে ভাঙে সেই জুটি। ২৬ রান করে ফেরেন মার্শ।

এরপর মার্নাস লাবুশেন ধুঁকেছেন বেশ, শেষমেশ জেফরি ভ্যান্ডারসের শিকার হয়ে ফেরেন সাজঘরে। ইনিংসের মাঝপথে ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গার বলে ফেরেন অ্যালেক্স ক্যারি, দলের তখনো প্রয়োজন ছিল ১২৮ রান। তবে অস্ট্রেলিয়া পরিস্থিতিটা সামাল দেয় ওয়ার্নারের সঙ্গে ট্র্যাভিস হেডের ৫৮ রানের জুটিতে। দু’জন দারুণ সব শটে চাপটা ক্রমেই বাড়াচ্ছিলেন লঙ্কানদের ওপর। তবে চাপটা আরও বেশি বাড়ার আগে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ফেরান হেডকে। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার নায়ক গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এরপর ফেরেন থিকশানার অফ ব্রেকে। শুরুতে এলবিডব্লিউর আবেদন নাকচ করলেও রিভিউতে সফলতা পায় লঙ্কানরা।

সঙ্গীদের আসা যাওয়ার মিছিল দেখলেও ওয়ার্নার অন্যপাশে অবিচল ছিলেন। এগোচ্ছিলেন ১৯তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দিকে। তবে ধনাঞ্জয়া সেটা হতে দেননি। সেঞ্চুরির এক রান আগে ফ্লাইটে বিভ্রান্ত করে ওয়ার্নারকে স্টাম্পিংয়ের শিকার বানান তিনি। ১৯২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে অজিরা তখন ঘোর বিপাকে। আশা জাগিয়ে ক্যামেরন গ্রিনও ফেরেন ২২৩ রানে। লোয়ার অর্ডার এরপর চেষ্টা করেছে, তবে সে চেষ্টা ফলাফলটা অজিদের পক্ষে আনতে পারেনি শেষমেশ।

এর আগে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে চারিথ আসালঙ্কার সেঞ্চুরিতে ভর করে শ্রীলঙ্কা একটা লড়াকু স্কোর দাঁড় করায়। টস হেরে শুরুতে ব্যাট করে অল্প রানে নিরোশান ডিকওয়েলা, কুশল মেন্ডিস আর পাথুম নিশাঙ্কাকে হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। এরপর ধনাঞ্জয়া আর আসালঙ্কার ১০১ রানের জুটিতে সে ধাক্কা সামলায় দলটি। মিচেল মার্শের শিকার হয়ে ধনাঞ্জয়া ফেরেন ইনিংসের মাঝপথে। এরপর শ্রীলঙ্কা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে।

তবে আসালঙ্কা ছিলেন একপাশে অবিচল। সেঞ্চুরির পর তিনি ফিরেছেন দলীয় ২৫৬ রানে। তখনও ২৭০ রানের আশা দেখছিল লঙ্কানরা। এরপর লঙ্কানরা আর দুই রানই যোগ করতে পেরেছে কেবল। শেষ দুই ব্যাটসম্যানই যে ফিরেছেন রানআউটের কাটায় পড়ে! ২৫৮ রানে ইনিংস শেষ করে শ্রীলঙ্কা প্রমাদ গুণছিল, টি-টোয়েন্টির এই রমরমার যুগে যে অস্ট্রেলিয়ার সামনে এই লক্ষ্য খুব বড় কিছু নয়! তবে লঙ্কান বোলাররা এই পুঁজিকেই যথেষ্ট বানিয়ে দেন, তাতেই ৩০ বছর পর অজিদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ নেয় লঙ্কানরা।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা