Friday, মে ৩, ২০২৪

সরকারের পতন এখন সময়ের দাবি : রেজাউল করীম

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিএনপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে মতবিনিময়সভা করেছে। আজ শনিবার ঢাকার গুলিস্তানে ইম্পেরিয়াল হোটেলে শনিবার সকাল ১০টায় এই মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

মতবিনিময়সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি নেতা বরকতুল্লা বুলু, বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশ জমিয়তুল মুছলেহীনের আমির মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, জাপা নেতা গোলাম মসীহ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, বাংলাদেশ মসজিদ মিশন ও সেন্ট্রাল মসজিদ মিশন সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, খেলাফতে রব্বানী পার্টির চেয়ারম্যান মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম।

সভা শেষে এক লিখিত বক্তব্যে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা আজ হুমকির মুখে। স্বাধীনতার মূল চেতনা- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার আজ ভূলুণ্ঠিত। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার নাই বললেই চলে। বর্তমান সরকার ভোটের নামে প্রহসন করে, ভোটকেন্দ্র দখল করে দিনের ভোট রাতে নিয়ে এবং ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল কারচুপি করে গোটা বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে লজ্জিত করেছে। এতে করে ক্ষমতাসীন সরকার জনবিচ্ছিন্ন একটি স্বৈর সরকারে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে বিদেশি শক্তিগুলো বিভিন্ন ছুতায় বাংলাদেশকে নানা রকম নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকার ক্ষমতায় থাকার সব বৈধতা হারিয়ে ফেলেছে।

মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা আজ চরম হুমকির মুখে। তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি, দেশীয় ব্যাংকের তারল্য সংকট এবং ডলার সংকট ও মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিকে আজ পঙ্গু করে ফেলেছে। বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির অশুভ প্রভাব- স্বাধীন রাষ্ট্রের সম্মান ক্ষুণ্ণ করছে। তাই সরকারের পতন এখন সময়ের দাবি। বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম জাতীয় সরকারের প্রস্তাবিত রূপরেখা তুলে ধরেন। রূপরেখাটি হলো-

১. আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে।
২. যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
৩. জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
৪. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
৫. সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৬. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
৭. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
৮. বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।

লিখিত বক্তব্যে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচনটি সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অনেক দলই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা দলীয় সকারের অধীনে নির্বাচনের কথা যেহেতু পূর্ব থেকে বলে আসছে, তাই হয়তো এ পদ্ধতিগুলো তাঁরা পরিবর্তন করতে চান না। আমরা বলি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও তো সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে। ১৯৯১ সালের আগে কোনো দিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে কোনো সরকার ছিল না এবং এ নামে নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি। এ পদ্ধতিও শেষ পর্যন্ত অবিতর্কিত থাকেনি। আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন তো স্বাধীনতার পর কোনো কালেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। সামরিক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছিল ফরমায়েশী নির্বাচন। সামরিক সরকার জনমতের তোয়াক্কাই করে নাই। তাই জাতীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও আলেম-ওলামাগণের নিকট এ ব্যাপারে সুচিন্তিত মতামত প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা অনেক বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও উলামায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব এবং সিইসির পদত্যাগের দাবিতে সব দেশপ্রেমিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দাবি জানান তিনি।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা