Sunday, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

শুভ জন্মদিন ফুটবলের খুদে জাদুকর

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : আর্জেন্টাইন বিশ্বজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসি সম্পর্কে এমনই মন্তব্য করেছিলেন বার্সেলোনার সাবেক কোচ ও বর্তমানে ম্যানচেস্টার সিটির ডাগআউট প্রধান পেপ গার্দিওলা। মেসির খেলা দেখাকে অনেক ফুটবল গ্রেটই চোখের প্রশান্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। দৈহিক গড়নের কারণে এই মোহনীয় মহাতারকার নাম হয়েছিল ‘খুদে জাদুকর।’ যিনি সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপ দিয়ে ব্যক্তিগত অর্জনের সকল অপূর্ণতা ঘুচিয়ে দিয়েছেন। লিখেছেন পূর্ণাঙ্গ মহাকাব্য। আর্জেন্টাইন মহাতারকা আজ (২৪ জুন) ৩৬ বছরে পদার্পণ করেছেন।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লা লিগার শিরোপা জেতা কোচ ফ্যাবিও ক্যাপেলো বলেছিলেন, ‘লিওনেল মেসি শুধু একজন ফুটবলারই নয়, সে একজন জিনিয়াস এবং বিশ্ব ফুটবলের একমাত্র জিনিয়াস।’ সেই সময় আন্তর্জাতিক ট্রফি নেই বলে কেউ কেউ মেসিকে সেরা মানতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু এর জবাবও দেন সাবেক ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার কোচ, ‘সে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি কিন্তু এর কারণ সে একা এটা করতে পারবে না।’

তবে এখন যে মুহূর্তে মেসি দাঁড়িয়ে আছেন, সেই অপূর্ণতার কোন ইস্যু অন্তত তাকে নিয়ে টানার সুযোগ নেই কারও। আকাশি-নীল জার্সিধারী আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে জিতিয়েছিলেন ফুটবল কিংবদন্তী দিয়েগো ম্যারাডোনা। এরপর আলবিসেলেস্তে সমর্থকদের একই উপলক্ষ্যের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়েছিল। সাড়ে তিন দশক পর সেই আক্ষেপকে পাশ কাটিয়ে কাতার বিশ্বকাপে বহুল আরাধ্য সোনালী ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছেন মেসি। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এই আর্জেন্টাইন অধিনায়কের বিশ্বজয়ী হওয়ার পর প্রথম জন্মদিন আজ। তাই হয়তো এটি তার শ্রেষ্ঠ জন্মদিনও বটে!

আর্জেন্টিনার রোজারিও এক সময় পরিচিত ছিল মার্কসবাদী বিপ্লবী চে গুয়েভারার জন্মস্থান হিসেবে। সেই শহরে ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন জন্ম নেন লুইস লিওনেল আন্দ্রেস মেসি কুচিত্তিনি। যিনি রোজারিওকে নিয়ে গেছেন আরও অনন্য উচ্চতায়, যেখানে ধর্ম-মত মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বায়োগ্রাফি ডটকমের মতে, মেসি বাল্যকালে লিওনেল লুইস নামে পরিচিত ছিলেন। কখনও কখনও পরিবারের সদস্যরা তাকে লুইস বা লিওনেল নামেও ডাকতেন। তবে সময়ের পলাবদলে তিনি লিওনেল মেসি নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

‘গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি’ (শিশুদের উচ্চতা ঘাটতিজনিত সমস্যা) রোগে শৈশবে আক্রান্ত লিও আর্জেন্টিনার তৃতীয় বৃহত্তম শহর রোজারিও ছাড়েন মাত্র ১৩ বছর বয়সে। তবে রোজারিও আজও মেসিকে ছাড়েনি। যেখানে তার শেকড়, শীর্ষে পৌঁছেও তার জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে সেই শহর। আর্জেন্টাইন গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্যমতে, নিজের শ্রেষ্ঠ জন্মদিনেও জন্মস্থান রোজারিওতেই আছেন মেসি। দুদিন আগেও তাকে রোজারিওর শহরে স্ত্রী অ্যান্তোনেল্লা রোকুজ্জো এবং পাঁচ বছর বয়সী সন্তান কিরোকে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।

সেই শৈশবে স্পেনের বার্সেলোনায় পাড়ি জমিয়েছিলেন মেসি। যেখানে নিজের অসংখ্য বসন্ত কাটিয়ে গড়েছেন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। ক্লাব ক্যারিয়ারে তার বেশিরভাগ বড় অর্জন কাতালান ক্লাবটির হাত ধরে। ২০২১ সালে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার আগে পেশাদার ক্যারিয়ারের পুরোটাই কাতালান ক্লাবটিতে খেলেন তিনি। দলটির হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (৭৭৮) ও গোলের রেকর্ড (৬৭২) দুটিই তার। সর্বোচ্চ সাতটি ব্যালন ডি’অর জেতা মেসি বার্সেলোনার হয়ে ৩৫টি শিরোপা জিতেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ১০টি লা লিগা, চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনটি উয়েফা সুপার কাপ, সাতটি কোপা দেল রে ও তিনটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মেসি এখন আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলটির হয়ে তিনি এখন পর্যন্ত ১০৩টি গোল করেছেন। কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসি গোল্ডেন বল এবং ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারও জিতেছেন। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী এবারও সেই দৌড়ে রয়েছেন। গত এক বছরে মেসি জাতীয় দলের হয়ে সম্ভাব্য সবকিছু জিতেছেন, কোপা আমেরিকা ও ফিনালিসিমার পর বিশ্বকাপ দিয়ে তার পুরো মৌসুমই হয়ে উঠেছে রঙিন।

পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলা মেসি কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কাতার বিশ্বকাপ দিয়ে সাফল্যের বৃত্ত পূরণ করা এই জাদুকর পরবর্তী বিশ্বকাপের (২০২৬) আগেই পা দেবেন ৩৯ বছরে। বয়স ও সময়ের কারণে তখনও খেলতে পারা কঠিন বলে স্বীকার করেছেন মেসি। তবে তার আগে আসন্ন কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও তার নান্দনিক ফুটবল দেখতে পাবেন ভক্তরা।

ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় মেসি ইউরোপ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকান মেজর লিগ সকার (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে। যদিও তাদের সঙ্গে এখনও আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। দুই মৌসুম কাটানো পিএসজির সঙ্গে মেসির চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ৩০ জুন। এরপরই তিনি আমেরিকান ফুটবলের অংশ হয়ে যাবেন। মেসিতে বুদ দর্শকরা স্বভাবতই অখ্যাত সেই লিগকেও নিজেদের আগ্রহের প্রথমদিকে রাখবেন। তারা চাইবেন খুদে জাদুকরের নান্দনিকতা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই যান না কেন, তা থেকে তারা যেন বঞ্চিত না হন। কিংবা ফুটবল মাঠে মেসির সৃষ্টি করা অসংখ্য স্মৃতিতে তারা কাতর থাকবেন বছরের পর বছর, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা