Saturday, মে ৪, ২০২৪

ওজন মেপে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু, কেজি ৪৫০ টাকা

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : কোরবানির ঈদে খামারিরা অনেকটা শঙ্কায় থাকেন লাভের অংকে তাদের পালনকৃত পশু বিক্রি করা নিয়ে। গো-খাদ্যের চড়া দাম আর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গরুর কারণে আসন্ন ঈদকে ঘিরে অনেক খামারিরাই পশু বিক্রির জন্য নানা অফার অবলম্বন করতে শুরু করেছেন। আর তেমনই একটি অফার হলো লাইভ ওয়েটে পশু বিক্রি।

ঈদে হাঠে পশু না তুলেই খামার থেকে লাইভ ওয়েটে পশু বিক্রি করে অনেকটাই চিন্তামুক্ত হয়েছেন রংপুরের একজন সফল খামারি আব্দুল মতিন আজিজ। আব্দুল মতিন রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জের দেওয়ানটুলি এলাকার বাসিন্দা। জমজম ক্যাটল ফার্ম নামের একটি গরুর খামারে লাইভ ওয়েটে বেচাকেনা করছেন কোরবানির পশু। ৪৫০ টাকা কেজি দরে খামারেই বিক্রি করছেন গরু। গত তিন বছর ধরে এই পদ্ধতিতে গরু বিক্রি হচ্ছে এই খামারে।

জমজম ক্যাটল ফার্মে গিয়ে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই খামারে আগ্রহী ক্রেতারা আসছেন এবং গরু দেখছেন। পছন্দ হলে ওজন স্কেলে উঠিয়ে পশুর ওজন দেখে দাম পরিশোর করে খামারেই গরু রেখে যাচ্ছেন তারা। ঈদুল আজহার এক দিন বা দুই দিন আগে গরু নিয়ে যাবেন ক্রেতারা। আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য ১২০টি গুরু প্রস্তুত করা হয়েছে এই খামারে। ওজনে গরু বেচাকেনায় ক্রেতাদেরও বেশ সাড়া পড়েছে। বর্তমানে ক্রেতারা হাটের ঝামেলা মুক্ত এবং ফ্রেশ গরু কিনতে ছুটছেন খামারে। তবে এভাবে গরু বিক্রি করে ক্রেতা-বিক্রেতা লাভবান হলেও রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

খামারে আসা ক্রেতারা বলছেন, ওজন স্কেলে গরু কেনায় সুবিধা অনেক। ওজন স্কেলে গরু মেপে বেচাকেনার কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ঠকে যাওয়ার চিন্তা থাকে না। বাজেট অনুযায়ী সুস্থ-সবল পশু কিনতে পারছেন ক্রেতারা। পীরগাছার দেউতি এলাকার ইমরান মাসুদ নামের এক যুবক জমজম ক্যাটল ফার্মে গরু কিনতে এসে বলেন, কিছু পশুর হাটে ঘুরেছি। এখনও পছন্দসই গরু কিনতে পারিনি। এ কারণে খামারে এসেছি। ওজন মেপে পছন্দমতো গরু কেনার পদ্ধতিটি আমার ভালো লেগেছে।

তিনি আরও বলেন, আমার উদ্দেশ্য এবং নিয়ত সম্পর্কে আল্লাহ সবকিছুই জানেন। কোরবানির উদ্দেশ্য থেকে গরু কিনতে এসেছি। যদি পছন্দ হয় কিনব ইনশাআল্লাহ। খামারিরা জানান, হাট থেকে গরু কিনতে গেলে ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, দূর-দূরান্ত থেকে আসা গরুকে স্টেরয়েড বা মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে কিনা এটা গরু দেখে বোঝার উপায় থাকে না। তাই ক্রেতারা দেখে-শুনে গরু নিতে আসছেন খামারে।

জমজম ক্যাটল ফার্মের মালিক আব্দুল মতিন আজিজ বলেন, খামারে থাকা সব গরু শাহিওয়াল জাতের। গরুকে ফিড ও নিয়মিত দেশি খাবারের পাশাপাশি পরিচর্যার কোনো কমতি নেই। একেকটার ওজন ও আকৃতি একেক রকম। এই গরুগুলো লালন পালন করে ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ আসছেন, গরু দেখে পছন্দ হলে তারপরই তারা কিনছেন। গরু দেশি ও প্রকৃতি নির্ভর খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। এ কারণে দেখতেও অনেক স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী। প্রতিদিন কেউ না কেউ আসছেন।

আব্দুল মতিন আজিজ জানান, ইতোমধ্যে বিক্রি হওয়া গরুগুলো খামারেই রাখা হয়েছে। গরুর খাওয়া, দেখাশোনা এবং ঈদের আগে ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সব খরচ খামার থেকে ব্যয় করা হবে। কোনো গরুকে ইনজেকশন দিয়ে মোটাতাজা করা হয়নি। যারা গরু কিনেছেন তাদের গরুর শরীরে একটি নম্বর লেখা রয়েছে, যাতে সহজেই চেনা যায়। সব কিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ওজনে মেপে গরু বিক্রি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত করেছেন খামারি ও গৃহস্থরা। এই বিভাগে কোরবানির চাহিদা রয়েছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার পশুর। চাহিদার তুলনায় প্রায় পৌনে ৪ লাখ পশু বেশি থাকার পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর।

বিভাগের আট জেলার মধ্যে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। এ জেলায় ষাড়সহ মোট গরু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৪টি। ছাগল-ভেড়া ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৪টি। জেলায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৮-২০ হাজারের মতো। চাহিদা তুলনায় এ জেলাতে ৬৭ হাজারের বেশি পশু উদ্বৃত পশু থাকবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার।

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা