Monday, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

নির্বাচন কমিশন ভোট বাতিলের ক্ষমতা হারায়নি : ইসি রাশেদা

ইউরোপ বাংলা ডেস্ক : গত ২৮ মার্চ আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবটি নীতিগতভাবে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হয়। তাতে উল্লেখ ছিল, ভোটের পর কোনো কেন্দ্রে, এমনকি পুরো নির্বাচনী এলাকার (আসন) ভোটে বড় ধরনের অনিয়ম, কারসাজি ও ভোটের প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার প্রমাণ পেলে গেজেট প্রকাশ স্থগিত এবং ভোট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দেশ দিতে পারবে ইসি।

গত ১৮ মে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন জানান, নির্বাচনে কোনো ভোটকেন্দ্রে বড় ধরনের অনিয়ম, কারসাজি ও ভোট প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার প্রমাণ পেলে নির্বাচন কমিশন সেই কেন্দ্রের ভোট বা ফল বাতিল করে পুনরায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আইনের এমন বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ সংশোধনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নির্বাচন বন্ধ করার প্রধান অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ টেনে রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ‘সেটা কিন্তু ৯১ এর ক। একটা নির্বাচনে তিনটা পর্যায়। প্রথম হলো নির্বাচন পূর্ব, আরেকটা হলো নির্বাচন চলাকালীন, একটা নির্বাচনের পরবর্তী।

এই তিনটা ধাপের মধ্যে ৯১-এর ক-তে যেটা আছে, সেটা কিন্তু নির্বাচন পূর্ব পর্যন্ত, নির্বাচন চলা পর্যন্ত। ওখানে কমিশনের একটা ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেই ক্ষমতায় কমিশন কোনো রকম অনিয়ম, কারচুপি যেটাই হোক, নির্বাচন কমিশনের নজরে এলে যদি দেখে এরকম, তাইলে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। এইটা তো আছেই আইনে, এক্সিসটিং।’ আরপিওর অধ্যায় ৭ এর ৯১ ক-তে উল্লেখ আছে, যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি-প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করিতে সক্ষম হবে না, তাহা হলে এটি যেকোনো ভোট কেন্দ্র বা ক্ষেত্রমত, সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।

বিভ্রান্তির প্রসঙ্গ টেনে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘অনেকে মনে করছেন যে ৯১ (ক)-তে যে ক্ষমতাটা ছিল, নির্বাচন চলাকালীন নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার যে সুযোগটা, সেটা বোধহয় খর্ব হয়েছে। বিষয়টা তা নয়। আমি যতটুকু বুঝি, ওটা তো হবেই না। কেননা আমরা তো ওটা চাই-ই নাই। সেখানে প্রস্তাবনা হলো ৯ (ক) এর সঙ্গে ক(ক) বলে আরেকটা উপ-অনুচ্ছেদ যোগ দেওয়া। রিটার্নিং অফিসার ফলাফল প্রকাশের পর থেকে গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টা অনিয়ম হলে যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই ক্ষমতাটা চাওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা এখানে এসে দেখলাম, নির্বাচনের ফলাফলের তিনটা পর্যায়। আপনারা জানেন যে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে একটা রেজাল্ট দেন, এই রেজাল্ট চারটা কপি করা হয়। একটা প্রার্থীদের জন্য, একটা সাঁটানোর জন্য, একটা রিটার্নিং কর্মকর্তার জন্য, আরেকটা কপি করতে হয়। এগুলো করার পর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠান। কিন্তু কেন্দ্রে নয়, অন্যখানে থাকেন। এরপর তিনিও ফলাফল ঘোষণা করেন। সেই রেজাল্ট কিন্তু প্রাইমারি রেজাল্ট। ওটা চূড়ান্ত নয়। ওটার ওপর কিন্তু কে জিতল, তার কার্যক্রম শুরু হবে না। শুরু হবে কখন, যখন কমিশন থেকে গেজেট হবে।’

কমিশনে ফলাফল পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় অভিযোগ আসে জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এই সময়টার মধ্যে কোনো অভিযোগ এলে কমিশনের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। সেই অভিযোগের বিষয়ে কমিশন কিছু করতে পারে না। তাকে গেজেটটা করে দিতে হয়। যদি বড় ধরনের কোনো অভিযোগ থাকে, যে সত্যিকার অর্থেই বড় কোনো অনিয়ম ঘটে গেছে, সেটা রেখেই যদি একটা গেজেট করে দেওয়া হয়, তখন কিন্তু যারা অভিযোগ তোলেন তাদের কিন্তু একটা কষ্ট থেকেই যায়।’

রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘যে কারণে কমিশনের প্রতি একটা অনাস্থা থেকেই যায় যে, আমরা একটা অভিযোগ দিলাম, কমিশন যাচাই-বাছাই কিছু না করে রিটার্নিং কর্মকর্তা যে রেজাল্ট দিল, সেটাই তারা বাস্তবায়ন করে ফেলল। একটা ক্ষোভ কিন্তু তৈরি হয়। একটা নির্বাচন করছেন, কাজেই তার কথাটা তো আমলে নেওয়া উচিত। এই জায়গাটাতেই আমরা চিন্তা করলাম যে শূন্য আছে। কমিশনের হাতে কোনো সুযোগ নেই। আমরা সেখানেই একটা নতুন প্রস্তাবনা পাঠালাম সংশোধনীতে, যেটা মন্ত্রিপরিষদে গেছে।’

‘আমরা পাঠালাম ৯-এর ক, তার সঙ্গে ক-এর ক বলে একটি উপ-অনুচ্ছেদ যোগ করতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেখানে কোনো অনিয়মের তথ্য বা অভিযোগ এলে কমিশন সেই গেজেট নোটিফিকেশনটা স্থগিত রাখবে। এরপর তদন্ত করে যদি অভিযোগটার সত্যতা প্রমাণ হয় যে, আসলেও বড় ধরনের অনিয়ম হয়ে গেছে, সেখানে তখন কমিশন সুনির্দিষ্টভাবে যে জায়গাটায় অনিয়ম হয়েছে, সেই জায়গাটার যে কেন্দ্র বলেন বা যে আসনটার ভোট বাতিল করার জন্য চাচ্ছিলাম, মন্ত্রিপরিষদ ওখানে পুরো আসনের কথাটা বাদ দিয়ে সেটা খণ্ড করে আংশিকভাবে একটা অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা পুরোটা কপি এখনও দেখিনি।’

গাইবান্ধার ভোট প্রসঙ্গে ইসি রাশেদা বলেন, ‘গাইবান্ধায় আমরা যখন সিসি ক্যামেরায় নানান ধরনের অনিয়ম দেখছিলাম, গোপন কক্ষের মধ্যে ভোটার ভোট দেওয়ার আগেই অন্য কেউ দিয়ে দিচ্ছেন, ওখানে আসলে কোনো ভোটারই ভোট দিতে পারছে না, তখন কিন্তু আমরা ৯১ (ক) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে নির্বাচনটা বন্ধ করেছি।’

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

I agree to the Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেসবুকে ইউরোপ বাংলা